Monday, March 29, 2021

জীবনের পাতা হতে ( ২৩.০৮.১৯)


গোপালগঞ্জ হতে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছি ৩.৩০ এর পরে। বলে রাখা ভালো ক্যাম্পাসে লম্বা/মাঝারি /ছোট ছুটি যাই হোক না কেন,ছুটি হলে একটি মূহুর্ত ও অপেক্ষা  করি না।  ১৫ -২০ মিনিটে ব্যাগ গোছাতে সময় নিয়ে,  বাকি জিনিস  ট্রাঙ্কে রেখেই গোল্লাছুট। মাইকেল  মধুসূদন দত্তের মত গৃহ আকুলতায় আমি ব্যাকুল হই । বলতে ইচ্ছে  হয়, "সতত তোমার কথা ভাবি এ বিরলে "।


মেসের পাশের কালিগঙ্গা  তথা   মধুমতী  নদীর টান আমার আমাকে বেঁধে  কখনোই  রাখতে পারি নি। আজও না।  তাই কাল সকাল পর্যন্ত  অপেক্ষা  করার জো নেই। 


গোপালগঞ্জ  হতে খুলনা, খুলনা হতে সাতক্ষীরা, 

সাতক্ষীরা  হতে লোকাল বাসে বুধহাটা, সেখান হতে ভ্যানে, তারপর পায়ে হেঁটে  আমার চূড়ান্ত  গন্তব্যে পৌচ্ছাতে হবে। 

খুলনায় পৌচ্ছে,  সাতক্ষীরার  উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলাম।  বাসটি  নির্ধারিত  সময় হতে ১২ মিনিট লেটে পৌচ্ছালো। ততক্ষণে  সাতক্ষীরা  টু চাপড়ার বাস,: স্টান্ড ছেড়েছে।  তবে এখানে একটা অদ্ভুত  নিয়ম আছে সেটি হলো:

  দিনের শেষ বাসটি ৭:৩০ তে স্টান্ড ছাড়লে ও বড় পুকুরের ওখানে ৮:৩০ পর্যন্ত  অপেক্ষা  করে।  কাল বিলম্ব  না করে রিসকা চড়ে বড় পুকুরের দিকে রওনা দিলাম। 


সাতক্ষীরা টু বুধহাটা গন্তব্য-স্থলের বাসটি আমার ধরতে হবে নতুবা কোন মোটরসাইকেল কে বিশ্বাস  করে সেটাই  চেপে বুধহাটার উদ্দেশ্যে  রওনা হতে হবে।  তবে সেক্ষেত্রে আমাকে অনেকগুলো  ফাকা জায়গা ক্রস করতে হতো।  ভাগ্য প্রসন্ন  ছিলো তাই,    ৭:৪২ বাসে উঠলাম বড় পুকুরের পাশ হতে।   আগেই ভেবে রেখেছিলাম আমাকে বাদুড়ের  মত ঝুলে ঝুলে যেতে হবে কিন্তু  তা হলো না, জানালর পাশে বসার স্থান পেলাম। 

কথায় আছে তো, ঘরপোড়া গরু সিঁদুরে  মেঘ দেখলেও ও ডরায়।  এ কথার মাধ্যমে  আপনারা নিশ্চয়ই  বুঝেছেন  খুলনা জিরো পয়েন্ট হতে যে বাসে উঠেছি তাতে ঝুলতে ঝুলতে এসেছি।  

বড় পুকুর ধার হতে অনেকেই উঠল।  ৫ মিনিটেই  বাসের সিট পূর্ন হলো।  একজন, আগন্তুক  শুনলেন আমার পাশের সিটটা খালি আছে কিনা।  

উওর দিলাম হ্যাঁ। সে বসে পড়লো  এবং মিনিট  পরে, কয়েকজন  স্বজন  কে ফোন করলো।  পরে শুনলাম  লোকটি একজনের  সাথে ভারতীয় দের মতো হিন্দিতে কথা বলছেন। প্রথমে ভাবলাম লোকটি বোধহয় তার প্রিয়সীর সাথে মজা করে হিন্দি  বলছে ।   

  ভাবলাম  হিন্দি  সিরিয়ালের  বদৌলতে  তাদের প্রেমটি পল্লবিত হয়েছে । 

মনে মনে বললাম :

"কিছু আবেগ,  ভালোবাসা  মিশে হয় প্রেমের

 সাগর,তার মাঝে থাকে শুধু স্বপ্নের ঘোর"।

 পুরান অনুসারে প্রেমের আশীর্বাদ-দাত্রী স্বয়ং আফ্রোদিতির আর্শীবাদ  তারা পেয়েছিল  কি আমি জানি না।  তবে পাশে বসে ভেবেই নিয়েছিলাম তারা অবিবাহিত  যুগল। 

ওসব ভাবনা হতে বেরিয়ে তাড়াহুড়ো  করে বেরুনোর  বালখিল্য  আচরণের কথা ভেবে জালনার পাশে বসে নিজে নিজে মৃদু হাসি হাসতেছিলাম । 

 দুপুরের  মিলটা রুমেই পড়ে আছে।  দ্রুত বাহির হব বলে সেটা গোগ্রাসে  গলাধঃকরণ  করিনি। সম্ভাবত, সেটি হতে মাছটি তুলে খেয়েছি ।  বেশি পানি পান করিনি।  তৃষ্ণা  পেয়েছে  খুবই। 

কী করা যায়! 

বাস হতে  নেমে পানি কিনে পুনরায়  উঠলে আবারও  বাদুড়ের  মত বাসে ঝুলার আশঙ্কা  উড়িয়ে  দেওয়া যায় কী? 

তাই আমার পাশের সিটের আগন্তুক কে স্বরণ করতেই হতো। 


কথা শেষ হয় না তাদের!  হলেই সিট টা দেখে রাখতে বলব। 

 তিনি কথা শেষ করলেন। নির্মলেন্দু  গুনের ভাষায় বলতে মন চাইলো " তখন পলকে দারুন ঝলকে হৃদয়ে  লাগিলো দোলা "

 আমি একটু বাহির হতে হেঁটে  আসবো? 

আমার সিটটি দেখে রাখবেন? 

সম্মতি পেলাম।

 ৮:০৭ এ নিচে নেমে কিছুক্ষন হাটাহাটি  করলাম এবং দোকানে গিয়ে পানি খাওয়ার ভাবনাটা মধ্যপ্রাচ্যের লোকদের  বিকশিত হলো ।  সেই যখন তরল কিছু তবে পানি কেনো?  

আমি জুস  খাবো। যদিও এটিকে এখন জুস বলা যাবে না, বলতে হবে ফ্রুট ডিরিংস। জুস কিংবা ফ্রুটস ডিরিংস যা হোক না কেনো সেটা বি,এস,টি,আই বুঝুক।  হাতে পাওয়া মাত্র  সেটা খেয়ে, তৃষ্ণা  মিটানোর তাগিদ অনুভব করলাম । 


  ৮:১৫ তে বাসে উঠে লোকটিকে ধন্যবাদ দিলাম।  


(কেননা লোকটি যদি জায়গাটা না দেখে রাখতেন তবে আসনে বসা কেউ আমাকে দেখে নিজে নিজে আবৃত্তি  করতেন হয়তো -

তালগাছ একপায়ে দাড়িয়ে, সব গাছ ছাড়িয়ে 

                                      উঁকি মারে আকাশে।

মনে সাধ কালো মেঘ ফুঁড়ে যায়-

                      একেবারে উড়ে যায়-

                                        কোথা পাবে পাখা সে?) 


ততক্ষণে  বাসটি মাছের বাজারে পরিনত হয়েছে।  যেহেতু আমার পাশের লোকটি হিন্দি  ভাষায়  কথা বলছে।  আমার একটু আগ্রহ  হলো তার সাথে আলোচলায় অংশ নেওয়ার৷ 


আমি : ভাইয়া,তো খুব সুন্দর  হিন্দি  বলেন। ইন্ডিয়াতে থাকতেন নাকি?  


( ভাবলাম : আমার চাচাতো ভাই সিরিয়াল  দেখে হিন্দি  শিখছে। সেও বোধহয়  এমনভাবে শিখছে।  বিনয়ের খাতিরে ইন্ডিয়া থাকে কিনা সেটা জানতে চেয়ে, আলোচনাটা সিরিয়াল দেখার কুফল নিয়ে আগাবো) 


আগন্তুক  : কেরালায় থাকি৷  ওয়েস্ট ব্যাঙ্গলের সিটিজেন  ।  বিয়েও করেছি কোলকাতায়। 


(  আমার ধারনাটি  ভূল সেটা স্পষ্ট  হলো। প্রেমিকার সাথে সে কথা বলছিলো সে অনুমান ও ভূল প্রমাণিত  হলো। তাহলে ইন্ডিয়ার  বিষয় জেনে ইচ্ছে  নিবৃত্ত  করা যাক। )  


আমি : বাংলাদেশ  এবং ইন্ডিয়া দুই দেশে থাকার অভিজ্ঞতা  কেমন? 


আগন্তুক : ভালো। ইন্ডিয়াতে ভালো থাকলেও এ দেশের প্রতি যে আত্নার বন্ধন তা কমবার নয়। দেশের রাজনৈতিক  অস্থিতিশীলতা বহু বছর আগে থেকে যা চলমান  আমাকে কষ্ট  দেয়৷ 


আমি : ( ভাবলাম : আমার দেশকে অস্থিতিশীল  বলবা তা হবে না) আমরা তো খবরে দেখি,বিজিপি,কংগ্রেস ও তৃন-মূলের ঝগড়া বিবাদ। আসলে ইন্ডিয়া কি  বাংলাদেশ হতে সুখে আছে? 


আগন্তুক  : তার কন্ঠে ও আক্ষেপ  ঝরলো।  বলে বসলেন মমতার ক্ষমতা কিছুটা হ্রাস পেয়েছে গত নির্বাচনে এবং বিজিপির উত্থান  ঘটেছে৷  দিলিপ ঘোষের ক্ষমতা ও কিছুটা বেড়েছে। 


আমি : মুখ্য মন্ত্রী  নির্বাচনে  সৌরভ  গাঙ্গুলি  কি মমতার বিপক্ষে  এন্ট্রি  নিবেন ( বিধান সভায়)? এমনটা  তো গুঞ্জন  উঠে।। 


আগন্তুক  : আশংকা  আছে তবে ফেল করবেন আমার ধারনা। 

দাদা রাজনীতিতে জড়ালে সর্বমোহলে গ্রহন -যোগ্যতা হারাবেন। 


আমি : কিছুটা আন্দাজ করলাম লোকটি রাজনীতি  সচেতন এবং   কিছুটা তৃনমূল কংগ্রেসের  সমর্থক।

 আরও নিশ্চিত  হতে

তার কাছে জানতে চাইলাম, যাদবপুর  ইউনিভার্সিটি তে বিজিপির কেন্দ্রীয়  মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় কে লাঞ্চনা করার ঘটনাকে কিভাবে  দেখেন? 


আগন্তুক  : আমি বাবুল সুপ্রিয়কে চিনি না। তবে তৃণমূল  কংগ্রেস  সুযোগ  পেলেই বি,জি,পি কে ছাড় দেয় না। সবাই কম বেশি খারাপ ভালো আছে।  বি,জি,পির অনেক ভালো দিক আছে তবে তাদের অনেকেই  অতি মাত্রায় সাম্প্রদায়িক এটা তাদের ব্যর্থতা ৷ 


আমি : আমার ধারনা টা ভাঙলো।  আমি কিছুটা অনুমান  করলাম, লোকটি একটি দলের সমর্থক  কিন্তু দল অন্ধ না।

 (তার সাথে আলোচনা  চালানো যেতে পারে৷ কেননা, আমার গভীর  বিশ্বাস  দলকানা লোকদের ভালো মন্দ পার্থক্য  করার জ্ঞানটুকু থাকে না) 

বললাম

এন, আর,সি বা নাগরিক পঞ্জি কে কিভাবে দেখলেন? 


আগন্তুক  : পশ্চিম বঙ্গে তো এটা হচ্ছে  না ।  এটা তো আসামে। 


আমি : সেটা তো জানি আপাতত  হচ্ছে  না তবে পশ্চিম  বঙ্গে হওয়ার  আশংকা  কি উড়িয়ে  দিলেন ? 


আগন্তুক  : উড়িয়ে  দেওয়া যাবে না।  তবে মোদি  সরকার  যদি চায় তাঁর গ্রহনযোগ্যতা নষ্ট  করবেন তবে এভাবে  করুন। আমার আক্ষেপ  নাই৷ 


আমি : শুনেছি, ১৯৭১ সালের নির্দিষ্ট  তারিখের পরে যারা গেছেন তারা নাগরিকত্ব  হারাবেন৷ আপনি কি শঙ্কিত? 


আগন্তুক : ভিতরে ভিতরে তৃণমূলের সমার্থক বাদ পড়বে সেটা তাদের স্টাটিজি কিন্তু  তাদের  মনে রাখা ভালো, যারা পরবর্তীতে সিটিজেন শিপ পেয়েছে তাদের  সিংহভাগ বি,জি,পি র সমর্থক । 


দেখেন নাই,সম্প্রতি একটি রাজ্যের ফলাফলে মানুষ  নাগরিক  পঞ্জির বিরুদ্ধে  প্রমান দিলো। কমিনিস্টদের সাথে কোয়ালিশন করে গদি টিকিয়ে  রাখতে হচ্ছে  ।  বি,জি,পি র ঘাটিতে রাহুল সোনিয়ার আবেদন  বাড়ছে৷ 


( কিছুটা শঙ্কা  তবে মনকে শান্ত রাখার প্রচেষ্টা  আমি দেখলাম ।  তাই অন্য প্রসঙ্গে  দৃষ্টিপাত করলাম) 


আমি: সে যাই হোক।  কেরালার খবর বলেন? 


আগন্তুক : কেরালা ইন্ডিয়ার  একদম সাউথ এ। অসাম্প্রদায়িক  চেতনায় সবাই  বেড়ে উঠছে। সব  থেকে বড় বিষয়  যার যার ধর্ম সেখানে পালন করে৷  সেখানে শিক্ষার হার অন্যান্য রাজ্যগুলো হতে বেশি। উড়িষ্যা,বিহার,উওর প্রদেশ এসব রাজ্যগুলোতে দশ ঘর ঘুরে একটা ইন্টার পাশ পাওয়া যায় না এবং মানুষের  সচেতনতাও কম। 


 আবার সব রাজ্যের বি,জি,পি র সকল নেতা মন্দ নন৷ প্রভাবশালীদের মধ্যে

যোগী আ. নাথ সাম্প্রদায়িক আমার কাছে মনে হয় ৷ 


আমি : সাম্প্রদায়িক দ্বন্দ্ব    বাধে কোন বিষয় নিয়ে বেশি? 


আগন্তুক  : গো মাংশ ভক্ষন৷  তবে কেরালার এ নিয়ে হত্যা বা মারামারি  হয় না। শিক্ষিত  তো বেশি সেখানে। 


আমি : (আমি আমাদের  আলোচনা টা গো মাংস ভক্ষন কিংবা না ভক্ষনের মধ্যে সীমাবদ্ধ  রাখতে চাইনি  তাই সচেতনভাবে প্রসঙ্গ এড়িয়ে) প্রশ্নটা করলাম কেরালায়  তো বন্যা হলো, এখন অবস্থা  কি? 


আগন্তুক  : সে তো প্রায় দেড় বছর আগে। এখন স্বাভাবিক। সে সময় আমি কেরালায়  ছিলাম।  অন্যান্য রাজগুলো ভালোই  সাহায্য  করেছে। 


আমি : তাহলে তো মানুষে মানুষে সম্প্রীতি  ভালোই , আবার ইন্ডিয়ায় যাচ্ছেন  কবে? 


আগন্তুক  : আজই বর্ডারে  গেছিলাম  একজন  কে পৌচ্ছে দিতে।  আমাদের  গ্রামেরই  মেয়ে।  তার বর তাকে বিয়ে করে ইন্ডিয়ার  এক হোটেলে  বিক্রি  করে দেয়। সেখান থেকে এক ইন্ডিয়ান  যুবক তাকে মুক্ত করে বিবাহ  করে এবং সে ঘরে তার একটা মেয়ে আছে। সপ্তাহ আগে সে এদেশে এসেছিলো৷  আমার পরিচিত ।   আজ তাকে   পৌচ্ছে দিলাম বর্ডার পর্যন্ত৷ 


আমি : বৈধ পথে তো আসতে পারতো। এভাবে সাহায্য  করলেন  তা নৈতিক  ভাবে নিজকে অপরাধী  ভাবছেন  নাকি? 

আগন্তুক ; 

না, দ্রুত  পাসপোর্ট  ভিসা করে আসা সম্ভব  ছিলো না। তার মা মুমূর্ষু  অবস্থায়  ঢাকায়  ছিলো।  প্রায় অন্তিম সজ্জায়। মা ও মেয়ে দুজনের ইচ্ছা  ছিলো শেষ সাক্ষাতের৷ 


আমি ; জীবনের  রিস্ক ছিলো তো মেয়েটির ।  যদি ফায়ারিং হতো। 


আগন্তুক  : রিস্ক তো অবশ্যই  ছিলো তবে প্রয়োজনে তো কিছু রিস্ক নিতে হয়৷ আর চোরাচালান  হওয়ার পথেই বেশি ফায়ারিং  হয়৷  মানুষ  পারাপারের  পথে কিছুটা কম৷ এক্ষেত্রে  দুই দেশ কিছুটা  মানবিক  থাকে সময়, কাল,স্থান,পাত্র ভেদে৷ সব সময় মানবিক  থাকে এমনটি না। 


আমি : বুঝলাম। আপনার প্রসঙ্গে  আসি।    বাংলাদেশ হতে ফিরে গিয়ে ওখানে কি সমস্যায় পড়তে পারেন আপনি? 


আগন্তুক  : কয়েক  মাসের মধ্যে আমার ৯ টা সিম অফ হয়ে গেছে।


আমি : লোকেশন  ট্রাক করে কোম্পানিগুলো কি সিম অফ করেন? 


আগন্তুক  : আমি অবগত না।  তবে অচল থাকলে অফ হয়। 


আমি : তাহলে নো ম্যানস ল্যান্ড বা কারোর সীমানা  না এমন জায়গায় গিয়ে কিছুদিন  পর পর অফ অন করলে কি এ সমস্যা  মিটতো? 


আগন্তুক  : এখন বর্ডার  এলাকায়  ঠিকঠাক  ওদেশের  নেটওয়ার্ক  থাকে না। ভোডাফোন ও আইডিয়ার  সার্ভিস  টা ভালো ওখানে কিন্তু এখানে কল আসে না ।  


আমি : ওদেশে ভ্রমন করেছেন কেমন? 


আগন্তুক  : ৩-৪ টা রাজ্য৷ কাস্মীরে যাওয়ার  ইচ্ছে  ছিলো কিন্তু সাহস  হলো না। 

কাস্মীরীরা মানতে চায়না তারা পাকিস্তান কিংবা ভারতের  অংশ এবং তারা হিংস্র ।  


আমি : হাসতে হাসতে বললাম, চীনকে বাদ দিলেন কেনো?  আকসাই তো চীনের অধীনে৷ 


আগন্তুক  : জানতাম  নাতো।  সারা পৃথিবীতে  সাম্প্রদায়িক  সম্প্রতি  থাকলে ভালো হতো। 


আমি : হ্যা।  মানবতা  বেচে থাকতো।  আচ্ছা,

আই,ডি কার্ড দিয়ে  কতটা সিম তোলা যায় ওখানে?  


আগন্তুক  : ১৫ টি (খুব সম্ভাবত এমনটি বলেছিলেন)  


কথা প্রসঙ্গে  ভারতের  মাদ্রাজ ভ্যালেরের কথা উঠে আসলো। সে নি: সংকোচে  ভারতের চিকিৎসা  ব্যবস্থার উন্নতির  কথা বললো। 


আমি: আপনার  পরিচিত কেউ  বাংলাদেশ  হতে ভারতে চিকিৎসা  সেবার জন্য  গেছে?  শঙ্খচিল সিনেমায় তো চিকিৎসা  সেবার কথা আলোচিত  হয়েছে । 


আগন্তুক  : আমি সিনেমাটি দেখিনি  তবে আমার এলাকার সাবেক চেয়ারম্যান  আমার বাসায়  উঠছিলেন। তিঁনি ফেরারলেস হসপিটালে চিকিৎসা  নিয়েছিলেন । 


আমি : নিজের নতুন দেশ এবং জন্মস্থানের অভিজ্ঞতা  কেমন?  


আগন্তুক  : অবশ্যই  ভালো।  তবে আপনাকে  আমার খুব চেনা মনে হচ্ছে ।  আমার এক সহপাঠীর সাথে মিল খুজে পাচ্ছি । আপনি কি বুধহাটা হাইস্কুলে  পড়েছেন ? 


আমি : হ্যাঁ।  তবে আপনাকে তো আমার চেনা মনে হচ্ছে  না। 


আগন্তুক  : আপনি কি আসাদুল্লাহ  হিমু? 


আমি : হ্যাঁ।  ( তাকে না চিনতে পারায় লজ্জা রেখা আমার মুখে স্পষ্ট  প্রতিমান হলে।  আমার মনে হলো পৃথিবীর  সকল অপরাধ  আমি করে ফেললাম।  যদিও ২৩০ এর বেশি স্টুডেন্ট আমরা ৬ষ্ট শ্রেণীতে তিনটা গ্রুপে পড়তাম। সে আমার গ্রুপে ছিলো না আমি নিশ্চিত ।)  


প্রশ্ন করলাম " আপনি কত বছর  ওখানে পড়ছেন?  আমার গ্রুপে কি ছিলেন? "


আগন্তুক  : ক্লাস সেভেন এবং আপনার গ্রুপে ছিলাম  না। 

( আমি অবাক  হয়েছি এই যে, হিমু নামটাই  তার মনে থাকার কথা।  আসাদুল্লাহ হিমু নামটা মনে রেখে সে আমাকে বহু গুনে ঋনী করেছে।) 

সম্পর্কটা আপনি হতে তুমিতে রূপ নিলো। জানতে চাইলো কোথায়  পড়ছি?  বললাম ।  তার পরিবার  স্বপ্ন  এসব নিয়ে কথা হলো। 


সে আমাকে নিশ্চিত  করলো যদি কখনো ভারতে বেড়াতে  যায় তাকে যেন স্বরণ করি। আমি বললাম হয়তো যাব না, তবে বাসে বসে যদি কথা বলার সুযোগ  আসে তবেই বলব। সে এবং আমি মৃদু হাসি দিলাম। সে ভ্রমণ  টা খুবই মজার ছিলো।  আমার নামবার সময় আসলো। বাস থেকে নেমে গেলাম।  বিদায়  সম্ভাষণ জানালাম একে অন্যকে।



No comments:

Post a Comment